বাথরুমে বোতলজাত হচ্ছে স্যাভলন, নকল ওষুধে ঠাসা ফার্মেসি
করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার সুরক্ষা সামগ্রী। বিভিন্ন দোকান, ফার্মেসি ঘুরে স্যাভলন না মিললেও মিলছে আল শেফা ফার্মেসিতে। ছোট-মাঝারি-বড় সব আকারের স্যাভলন ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের বিশাল সমারোহ ফার্মেসিটিতে। অথচ দেখতে আসল মনে হলেও এসব স্যাভলন ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ।
‘হেলথ অ্যান্ড হাইজিং ডিস্ট্রিবিউশন’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান এসব স্যাভলন তৈরি করছিল। প্রতিষ্ঠানটি মেয়াদোত্তীর্ণ স্যাভলন পাঁচ লিটার পানির বোতলে করে বাথরুমের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে ছোট ছোট বোতলে ভরে তা বোতলজাত করছিল। আর ফার্মেসিতে এই স্যাভলন বিক্রি করা হচ্ছিল।
এছাড়া নকল ইন্ডিয়ান মুভ, নিষিদ্ধ যৌন ওষুধ, নকল কেএন-৯৫ মাস্কও বিক্রি করছিল হেলথ অ্যান্ড হাইজিং ডিস্ট্রিবিউশন ও আল শেফা ফার্মেসি-৩ নামের ফার্মেসি। এমনকি মডেল ফার্মেসির নামধারী আল শেফা ফার্মেসিতে কোনো ফার্মাসিস্ট নেই। নেই ওষুধ বিক্রির ছাড়পত্র। এসব কারণে প্রতিষ্ঠানটির ১০ জনকে আটক ও ২৬ লাখ টাকা জরিমানা করেছে র্যাবের একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সোমবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদীয়া হাউজিং প্রধান সড়কের আল শেফা ফার্মেসিতে অভিযান পরিচালনা করে এই জরিমানা করা হয়। অভিযানটির নেতৃত্ব দেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু। অভিযানে সহায়তা করেন ওষুধ প্রশাসনের অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল মালেক ও র্যাব-২ এর সদস্যরা।
অভিযান শেষে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, সম্পূর্ণ অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে বাথরুমের মধ্যে নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ লেভেলবিহীন স্যাভলন ও হ্যান্ডস্যানিটাইজার বোতলজাত করছিল। সেগুলো বোতলজাত করা হচ্ছিল একটি আবাসিক ভবনের নিচ তলায়। হ্যান্ডস্যানিটাইজার, যা সম্পূর্ণরূপে দাহ্য পদার্থ।
আবাসিক ভবনে দাহ্য পদার্থ রাখার কোনো নিয়ম নেই। এদিকে, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের লাইসেন্স ও ফার্মাসিস্ট ছাড়া ফার্মেসি পরিচালনা করছিল আল শেফা ফার্মেসি-৩। ফার্মেসিটি এখন পর্যন্ত লাইসেন্সের জন্য আবেদনও করেনি। বিধিবহির্ভূত এই ফার্মেসি মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করার জন্য ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একটি লোগো ফার্মেসিটির মূল ফটকে ব্যবহার করে আসছিল।
অভিযানে ফার্মেসি থেকে বিপুল পরিমাণ নকল ওষুধ ও অনুমোদনহীন যৌন ওষুধ জব্দ করা হয়েছে। অনুমোদনহীন হ্যান্ড স্যানিটাইটার, চায়না থেকে আমদানিকৃত কেএন-৯৫ মাস্কের কথা বললেও সেগুলো নকল কেএন-৯৫ মাস্ক জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া নষ্ট ইন্সুলিন ও ভারতীয় অনুমোদনহীন ওষুধ জব্দ করা হয়েছে।
পলাশ কুমার বসু জানান, অভিযানে কারখানা ও ফার্মেসির দুজন মালিক ও ম্যানেজারসহ মোট ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। এরমধ্যে কারখানার মালিক মোহাম্মদ আলী মনসুরকে পাঁচ লাখ টাকা, ফার্মেসির মালিক শফিকুল ইসলামকে পাঁচ লাখ টাকা, আমির হোসেনকে তিন লাখ টাকা, ইউসুফকে এক লাখ, ওবায়দুল হককে এক লাখ, মনির হোসেন সুমনকে দুই লাখ, ইয়াসিনকে এক লাখ, রবিউলকে এক লাখ, ইবনে হাসানকে পাঁচ লাখ ও মো. রাসেলকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি নকল স্যাভলন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং ফার্মেসিটিকে সিলগালা করেছে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।