আমাকে বললেন, তুমি এসো না; জ্বর জ্বর লাগছে : সালওয়া
সারাহ বেগম কবরী। এদেশের চলচ্চিত্র জগতে এক ধ্রুবতারার নাম। সেই ধ্রুবতারার যে এভাবে ক্ষয়ে যেতে পারে। আলো আভা হয়ে ক্রমে ঝাপসা হয়ে যেতে পারে তা কে জানতো? হ্যাঁ ১৩ দিন হাসপাতালে থাকার পর করোনার কাছে হেরে গেলেন এই ‘মিষ্টি মেয়ে।’ অভিনয় শেষে এসেছিলেন পরিচালনায় এখানেই বেশ শক্ত ও উজ্জ্বল ভূমিকা ছিল।
কবরী পরিচালিত সর্বশেষ ছবি ‘এই তুমি সেই তুমি।’ ছবির শুটিঙের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে। বাকি ছল ডাবিঙের কাজ। ছবির নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেছেন নিশাত নাওয়ার সালওয়া।
বুবুজান নামের একটি ছবির শুটিঙে চাঁদপুর যাবেন বলে তাঁর ডাবিঙের কাজ আগেই সম্পন্ন করতে চান কবরী। তাই মার্চের ২৪ তারিখে সালওয়ার ডাবিওঙের কাজ সম্পন্ন হয়। সালওয়া সেই মুহূর্তের কথা স্মরণ করে কালের কণ্ঠকে বললেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। কবরী আপার এটা ছিল স্বপ্নের প্রজেক্ট। আমাকে বললেন, ‘সালওয়া এটা আমরা প্রথমেই একটা উৎসবে পাঠাবো। তারপরেই মুক্তি দেব। এটা দেখো খুবই ভালো একটা ছবি হবে।’
সালওয়া বলেন, ‘সেদিন স্টুডিওতে অনেক আলাপ হলো। অনেক স্বপ্নের কথা বললেন। আমি চাঁদপুর চলে গেলাম। এরপর ফিরে এসে ফোন দিলাম ৫ এপ্রিল। সেদিন একউ অভিমান নিয়েই বললেন, আমাকে তো ভুলেই গেছ। আমি হাসলাম। দেখা করতে চাইলাম। কবরী আপা বললেন, এসো না। আমার জ্বর জ্বর লাগছে। তুমি রেস্ট নাও, আমিও সুস্থ হই। তারপর সিনেমার বাকি কাজগুলো শেষ করবো।’
কথা শেষ না করেই সালওয়ার কণ্ঠ কান্নায় রুদ্ধ হয়ে যায়।
সময় নিয়ে বলেন, ‘একসাথে বসার কথা ছিল। সেটা আর হলো না, সেইসব দৃশ্য গুলো চোখের সামনে ভাসছে। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। আমাকে কবরী আপার ড্রাইভার শহীদুল ভাই খবর দিলেন। আমার কাছে মনে হচ্ছে এটা সত্য নয়, কবরী আপা চলে যেতে পারেন না। আমি তাঁকে খুব কাছে থেকে দেখেছি, তিনি অনেক শক্ত সামর্থ মানুষ; তিনি কেন এভাবে হেরে যাবেন?’
শুক্রবার রাত ১২টা ২০মিনিটে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে কবরী শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। কবরীর ছেলে শাকের চিশতী খবরটি কালের কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন।
খুসখুসে কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে করোনার নমুনা পরীক্ষায় দেন সারাহ বেগম কবরী। ৫ এপ্রিল দুপুরে পরীক্ষার ফল হাতে পেলে জানতে পারেন, তিনি করোনা পজিটিভ। ওই রাতেই তাঁকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৭ এপ্রিল দিবাগত রাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। অবশেষে ৮ এপ্রিল দুপুরে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে কবরীর জন্য আইসিইউ পাওয়া যায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁকে লাইফ সাপোর্ট নেওয়া হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হলো না।
১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্তের ‘সুতরাং’ দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় কবরীর। ১৯৬৫ সালে অভিনয় করেন ‘জলছবি’ ও ‘বাহানা’য়, ১৯৬৮ সালে ‘সাত ভাই চম্পা’, ‘আবির্ভাব’, ‘বাঁশরি’, ‘যে আগুনে পুড়ি’। ১৯৭০ সালে ‘দীপ নেভে নাই’, ‘দর্পচূর্ণ, ‘ক খ গ ঘ ঙ’, ‘বিনিময়’ ছবিগুলো।