সিলেটে জোড়া খুন: গৃহকর্মীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত হতেন শিক্ষিকা!

ঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি অবহিত করে সে আর ওই চিকিৎসকের বাড়িতে কাজ করবে না বলে পরিবারকে জানায় গৃহকর্মী। ঘটনার দিন বিকালে শিক্ষিকা গৃহকর্মীকে সাথে নিয়ে বিশ্বনাথের দশঘর গ্রামে গিয়ে পরিবারের কাছে গৃহকর্মীকে বিয়ের দাবি জানালে গৌরাঙ্গের পরিবার তাতে রাজি না হওয়ায় বিকাল চারটায় গৌরাঙ্গকে নিয়ে নিজ বাড়িতে চলে আসেন শিক্ষিকা তাপতি দে লাভলী। ওই দিন রাত ১১ টায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গৌরাঙ্গ ও শিক্ষিকা নিখোঁজের খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যকে সাথে নিয়ে গৃহকর্মীর বড় ভাই মরচান শিক্ষিকার বাড়িতে এসে লাশ দেখতে পেয়ে চিৎকার শুরু করলে শিক্ষিকার স্বামী ও পুত্র মিলে হুমকি ধামকি দিয়ে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।

এদিকে, চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের ১৪ দিন অতিবাহিত হলেও থানা পুলিশ ঘটনার মূলরহস্য বের করতে না পারা নিয়ে সর্বমহলে দেখা দিয়েছে নানা প্রতিক্রিয়া। খুনের পিছনের কারণ জানতে শিক্ষিকার সহকর্মীবৃন্দসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার লোকজন ঝড় তুলছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।

নিহত গৃহকর্মীর ভাই মামলার বাদি মরচান সরকার বলেন, অভাবের তাড়নায় বিগত প্রায় ৬ বছর ধরে তাপতী রাণী দে লাভলী-ডা: বিজয় ভুষন দম্পতির বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতো আমার ভাই গৌরাঙ্গ। যাওয়ার পর থেকেই গৌরাঙ্গের উপর নজর পড়ে শিক্ষিকার। তিনি জোর করে লিপ্ত হতেন অনৈতিক কাজে। এছাড়া শিক্ষিকার স্বামী ও সন্তানদের মধ্যে পারিবারিক কলহ দীর্ঘদিনের। ঘটনার দিন বিয়ের দাবি নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসেছিলেন তাপতি। আমরা রাজি না হওয়ায় গৌরাঙ্গকে সাথে নিয়ে তিনি পুনরায় বাড়িতে চলে যান।

মরচান সরকারের অভিযোগ, পারিবারিক কলহের জের ধরে পরিকল্পিতভাবে শিক্ষিকার স্বামী-সন্তান মিলে তপতী ও গৌরাঙ্গকে হত্যার পর জোড়া খুনের ঘটনাকে চাপা দিতে ভিন্নভাবে প্রবাহিত করার চেষ্ঠা করছেন। তারা আমার ভাই গৌরাঙ্গকে বানিয়েছেন বলির পাঠা। এ বিষয়ে আমরা আদালতে মামলা দায়ের করেছি। সুষ্ঠ তদন্তপূর্বক ভাইয়ের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানাই।

বাদি পক্ষের আইনজীবী মো: ওবায়দুর রহমান মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বুধবার মামলা দায়েরের আবেদন করেছি। সংশ্লিষ্ট আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মামলাটি আমলে নিয়েছেন। আদালত কার্যক্রম শুরুর পর এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলা যাবে।

প্রসঙ্গত, গত ১৯ জুন দিবাগত রাত ১২টায় উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের শোয়ার গাঁও গ্রামের ডা. বিজয় ভুষন দে‘র বাড়ির বসত ঘরের মেঝে থেকে তারই স্ত্রীর স্কুল শিক্ষিকা তাপতী রানী দে বিবস্ত্র গলাকাটা লাশ এবং একই ঘর থেকে গৃহকর্মী গৌরাঙ্গ সরকারের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে থানা পুলিশ। মৃতদেহের পাশ থেকে একটি ‍ছুরি ও একটি বটি উদ্ধার করা হয়। হত্যাকান্ডে এ দুটি অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে ও তপতীর ঘাড়ের ডান দিকে একটি কুপ ও ঘাড়ের পিছনে ছুরির আঘাত ছিল বলে সাংবাদিকদের জানায় পুলিশ।

শিক্ষিকার পরিবার ও পুলিশের দাবি, শিক্ষিকাকে খুন করে ওই গৃহকর্মী নিজেই আত্মহত্যা করে। ঘটনার দিন সন্ধ্যার পর কোনো এক সময়ে এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে।

গত ২০ জুন ময়না তদন্ত শেষে নিজ নিজ বাড়িতে অন্তুষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এ ঘটনায় গৃহকর্মীর মৃত্যু নিয়ে থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করার পর ২২ জুন শুধুমাত্র নিহত গৃহকর্মীকে অভিযুক্ত করে হত্যা মামলা দায়ের করেন শিক্ষিকার পুত্র ডা. তন্ময় দে বিপ্লব।

তবে জোড়া লাশ উদ্ধারের প্রথম দিন থেকেই গৃহকর্মীর পরিবার দাবি ছিল পরিকল্পিতভাবে শিক্ষিকাকে খুনের পর গৌরাঙ্গকে হত্যা করে তার লাশ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রেখেছে খুনিরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *