করোনার টিকা নেবেন খালেদা জিয়া?

করোনাভাইরাসের টিকা নিতে চান বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তবে কবে নাগাদ তিনি ভ্যাকসিন নেবেন তা এখনো নিশ্চিত করেননি। বিএনপির চেয়ারপারসনের চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

তবে দলীয় ও পারিবারিক সূত্র বলছে, ‘এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি’। তাছাড়া খালেদা জিয়ার শারীরিক যে জটিলতা রয়েছে, সে বিবেচনায় তিনি টিকা নেয়ার জন্য উপযোগী কি-না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।

সত্তরোর্ধ্ব খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে চোখ ও দাঁতের সমস্যা, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে ভুগছেন। তিনি নিয়মিত একাধিক ওষুধও সেবন করেন।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা করোনার টিকা গ্রহণের বিষয়ে সম্প্রতি বলেছেন, ‘অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসসহ জটিল রোগে ভোগা রোগীরা টিকাদানের বাইরে থাকবেন। তবে শুধু যদি আর্থ্রাটাইটিসজনিত সমস্যা থাকে, সেক্ষেত্রে হেমাটোলজি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘১৮ বছরের নিচে, গর্ভবতী মা, দুগ্ধশিশু, যাদের বেশি অ্যালার্জি-অ্যাজমা আছে এবং মুমূর্ষু রোগীরা করোনার টিকা নিতে পারবেন না।’

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে কারাদণ্ড হওয়ার পর থেকে কারাগারে ছিলেন খালেদা জিয়া। শারীরিক জটিলতার কারণে দুর্নীতির মামলায় কারাবন্দি থাকা অবস্থায়ই খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। এরপর গত বছরের ২৫ মার্চ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতিতে পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকে শর্তসাপেক্ষ মুক্তি দেয় সরকার। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে মুক্তির মেয়াদ শেষ হলে আবারও দ্বিতীয় দফায় মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস বৃদ্ধি করে সরকার। আগামী ২৫ মার্চ (বৃহস্পতিবার) তার দ্বিতীয় দফা মুক্তির সময়সীমা শেষ হবে। খালেদা জিয়া বর্তমানে তার গুলশানের ভাড়া বাড়ি ফিরোজাতেই আছেন। সেখানেই তার চিকিৎসা চলছে।

বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের দায়িত্বশীলদের একটি সূত্র জানায়, করোনাভাইরাসের টিকা নিতে ইতিবাচক অবস্থানে আছেন খালেদা জিয়া। ইতোমধ্যে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসা একাধিক দায়িত্বশীল জানান, বিএনপি-প্রধান ভ্যাকসিন নেবেন। কিন্তু কবে নেবেন, তা স্পষ্ট করেননি তিনি।

সূত্রের দাবি, তৃতীয় দফায় শর্তসাপেক্ষ মুক্তির মেয়াদ বাড়াতে পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করার প্রস্তুতি চলছে। পরিবার ও দলের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে দেশের বাইরে চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়ে। ফলে, সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশযাত্রার অনুমতি দেওয়া হলে ভ্যাকসিন গ্রহণ করবেন খালেদা জিয়া। আর বিদেশযাত্রার বিষয়ে সিদ্ধান্ত না হলেও ভ্যাকসিন গ্রহণে কোনও বাধা হবে না বলেও জানান একাধিক দায়িত্বশীল।

গত বছরের শুরুর দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন কারাবন্দি অবস্থায় হাসপাতালে থাকাকালে তার সঙ্গে দেখা করে বোন সেলিমা ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘তিনি হাত সোজা করতে পারছেন না। তার হাত বাঁকা হয়ে গেছে, আঙুল বাঁকা হয়ে গেছে, খুবই খারাপ অবস্থা এবং দুই হাঁটু অপারেশন করা হয়েছে। হাঁটুতেও ব্যথা, হাঁটু ফুলে গেছে। তিনি পা ফেলতে পারছে না।’

গত ১৮ অক্টোবর বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে ডাক্তার এসে রক্ত পরীক্ষা করাচ্ছেন। তিনি একা চলাফেরা করতে পারছেন না, নরম খাবার খাচ্ছেন। বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে সরকার মানবিক হলে দল ও পরিবারের পক্ষ থেকে আবারও আবেদন করা হবে।’

খালেদা জিয়ার টিকা নেয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তার চিকিৎসক দলের অন্যতম সদস্য বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘ম্যাডামের টিকা নেয়ার ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি, তিনি ফুলটাইম কোয়ারেন্টাইন মেনে চলছেন। এ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হলে জানতে পারবেন। তার ভ্যাকসিনের নেওয়ার ব্যাপারে কোনও নেগিটিভিটি নেই। উনি পজিটিভ।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ম্যাডামের টিকা গ্রহণের বিষয় নিয়ে দলীয় ফোরামে কোনো আলোচনা হয়নি। এটা তার পরিবার ও চিকিৎসকরা দেখভাল করবেন। টিকা তো নিতে হবে সবাইকে। আমরা টিকা নিয়ে ডিপ্লোম্যাসি করছি না, টিকা নিয়ে রাজনীতি করছি না। টিকা যেহেতু দেয়া হচ্ছে, আমরা সবাই নেব।’

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকা গ্রহণ নিয়ে শুরুতে বিএনপি নেতাদের অবস্থান ছিল নেতিবাচক। কোনও কোনও নেতা টিকা নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের নিধন করার অভিযোগও করেছিলেন। যদিও বিএনপির সিনিয়র কোনও কোনও নেতা ইতোমধ্যে টিকা নিয়েছেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে গিয়ে টিকা গ্রহণ করেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও সেলিনা রহমানও টিকা গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে।

দলীয় একটি সূত্রের ভাষ্য, দলের দায়িত্বশীল নেতাদের কেউ-কেউ টিকা নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য দেওয়ায় এখন প্রকাশ্যে কেউ টিকার বিষয়টি নিয়ে আগ্রহী নয়। কোনও কোনও নেতা টিকা নিলেও তা গোপন রেখেছেন। এক্ষেত্রে দলীয় প্রধান হিসেবে খালেদা জিয়া টিকা গ্রহণ করলে নেতাকর্মীরা উৎসাহিত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *